কুচবরন কন্যা তুমি, মেঘবরন কেশ,
সেই চুলেতে খোঁপা বাধলে লাগে তোমায় বেশ।
কি এমন মায়া আছে, তোমার ঐ আকাশনীল নয়নে?
প্রকাশ করতে পারি না আমি, যেকোনো শব্দ চয়নে।
কল্পনা বা বাস্তব, তুমি থাকো আমার স্মৃতি জুড়ে,
দিনের শেষে তোমায় মনে পড়ে, হাজারো মানুষের ভিড়ে।
মজার কিছু করে ফেলে, হাসো তুমি কতো!
আমি শুধু চেয়ে থাকি, মন্ত্রমুগ্ধের মতো!
যখন তোমার কপোল বেয়ে, অশ্রু নামে গড়িয়ে,
আমার মন আকাশে বৃষ্টি নামে, সব আনন্দ হারিয়ে।
আর কতোকাল রবে তুমি, আমার মনে কল্পনা হয়ে?
একদিন তোমায় খুঁজে পাবো, মিলিয়ে দিবো দুই হৃদয়ে।
অভাব
অন্যের তো অনেক আছে,
আমার কেনো নেই?
অন্যেরা শুধু পেতে থাকে
আমি কেনো শুধু দেই?
অন্যেরা খায় পোলাও-মাংস,
আমি তো খাই রুটি।
অন্যের যদিও পাকা বাড়ি,
কেনো নড়বড় কর আমার বাড়ির খুঁটি?
অন্যেরা করে দামী বস্ত্র পরিধান,
আমি পড়ি ছিন্নবস্ত্র, সৃষ্টিকর্তার এ কেমন বিধান?
একদিন দেখি, এক ভিক্ষুক ১৫ টাকা পেল ভিক্ষা করে,
১০ টাকায় সে রুটি কিনল, ৫ টাকা জমাল ভবিষ্যতের তরে।
ঐটুকু রুটিতেই সে খুঁজে নিল সকল রকম মজা,
যে হাসি তার মুখে দেখলাম তা অন্যদের নেই খেলেও মাংসভাজা।
এতক্ষণে সৃষ্টিকর্তা দেখালেন আমায় কুল,
যা আছে তা সন্তুষ্ট না হওয়াই আমার সবচেয়ে বড় ভুল।
ঐ ভিক্ষুকের সম্পদ নেই, তাও সে কত সুখী
আমার তো তবুও স্বল্প আছে, আমি কেনো রবো দুঃখী?
যখনি অভাব হয়ে দাড়াবে আমার খেদের কারণ,
এ ভিক্ষুকের কথাই, আমি করবো স্মরণ।
ভুলে যাবো সমস্ত দুঃখ, পাবো নতুন উদ্যম,
পরিশ্রম এবং সঞ্চয়ই যে সুখের সবচেয়ে বড় মাধ্যম।
আত্মহত্যা
সৃষ্টির সেরা জীবের মুকুট নিয়ে
জন্মেছো তুমি মানুষ হয়ে।
অন্য প্রাণীরা শুধু খায় আর বাঁচায় নিজ প্রান
তুমি মানুষ তাই তোমায় করতে হবে সংগ্রাম।
সংগ্রামের পথ নয়কো সহজ, রয়েছে উঁচুনিচু,
তোমার বিবেক আর জ্ঞান দিয়ে তুমি জিততে পারো সবকিছু।
চলার রাস্তা মসৃন নয়, থাকতে পারে কাদা,
তেমনি তোমার সামনে আসবে বিরাট কোনো বাধা।
সেই বাধাকে অতিক্রমের ক্ষমতা রয়েছে তোমার,
দরকার শুধু কিছু সাহস আর অনুপ্রেরণার।
জীবনপথে চলতে গিয়ে হোঁচট যদি খাও,
এডিসনের সহস্র প্রচেষ্টা আদর্শ ধরে নাও।
দুঃখ-কষ্ট হয়ে যখন পাহাড়সম হয়ে দাড়ায়
মৃত্যু কোনো সমাধান না, নয় কোনো উপায়।
তোমার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে কতোজন
আত্মহত্যা করেনি তারা, সংগ্রাম করে জিতেছে জীবন
সংগ্রামের ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা যদি করো,
ইহকালে ধিক্কার পাবে, পরকালের শাস্তি আরো বড়।
আত্মহত্যা সমাধান নয়, এটা মনে রেখো,
জীবন তুচ্ছ নয়, একে মূল্য দিতে শেখো।
প্রত্যাশা
সন্তান আমার বড় হয়েছে, পাঠাই তাকে স্কুলে
শিখবে হরেক বিষয়, দুষ্টুমি আর ফাজলেমি ভুলে।
সব বিষয় তাকে পারতে হবে, মুখস্থ থাকবে সব
খেলাধুলা করবে না, শুনতে চাই পড়ার কলরব।
সব শিক্ষকের হোমওয়ার্ক করবে নিখুঁতভাবে
সুন্দর হবে হাতের লেখা, শিক্ষকও খুশি তবে।
শিক্ষকের প্রশংসা কুড়াবে আমার সন্তান,
ফার্স্ট বয় হয়ে আমার স্বপ্নকে করবে বাস্তবে রুপদান।
ক্লাসের মধ্যে তাকে হতে হবে সবার চেয়ে সেরা
সুখ হাসি বিসর্জন দিয়ে সারাদিন পড়বে পড়া।
বড় হয়ে পেশা নিবে ডাক্তার-ইন্জিনিয়ার
তার কি হওয়ার ইচ্ছে, সেটা জানার কি দরকার!
আমি সন্তানের ভালো চাই, গড়বো নিজের মতো
ভালো ভালো ভাবতে গিয়ে, ক্ষতি করছি নাতো!
চাপিয়ে দিচ্ছি বিরাট বোঝা, বিশাল সিলেবাস
এই বয়সে সামলাতে দিচ্ছি টেনশনের ফাঁস।
আমার সন্তান চেষ্টা করছে আমার মুখ চেয়ে
নিজের স্বপ্নগুলো আমার জন্য বিসর্জন দিয়ে!
সফল হয়তো অনেক হয়েছে, খুঁত রয়েছে তবু
সফলতায় বাহবা দিবো না, ভুলটাই দেখাবো শুধু।
আগুনে পুড়েই তো সোনা খাটি হয়, আমার সন্তানও হবে
কিন্তু আমি ভুলে গেছি আগুনে পুড়ে কিছু ছাইও হয় বাস্তবে।
ভবিষ্যতের ভয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত বেছে নেয় কতোজন!
আমার সন্তান তেমন করলে সেদিন কে রবে আপনজন?
সফলতাকে মূল্য দিয়ে তারপর বুঝাবো কিসে আরো ভালো।
সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে চাইবো না কিছু যাতে ওর মুখ হয় কালো।
কমিয়ে নিবো সন্তানের উপর থেকে প্রত্যাশার বোঝা,
নিজের ইচ্ছায় বাঁচুক ও, মাথা উঁচু করে সোজা।
গাছ
আমাদের পরম বন্ধু গাছ
অকাতরে দিচ্ছে প্রতিটি নিঃশ্বাস।
মানুষকে তাদের প্রয়োজন নেই
প্রকৃতিই দেয় জল,
তারপরেও তারা মানুষকে দেয়
মুঠি ভরে ফুল ফল।
সৃষ্টিকর্তা তাদের ভাষা দেননি
দিয়েছেন নিরবতা,
তাই তারা কভু বলতে পারে না
তাদের প্রাণের ব্যাথা।
নিঃস্বার্থে তারা আমাদের দেয়
কাঠ আর লতা-পাতা,
জীবনদায়ী অক্সিজেন দিয়ে
তারাই দ্বিতীয় পিতা-মাতা।
লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছে
ঔষধি উপকরণ দিয়ে,
এ ঋণ কখনো শোধ হবে না
চিরকাল যাবে রয়ে।
যুগ যুগ ধরে গাছ দিয়েছে
ক্লান্ত পথিককে ছায়া,
তবু তাদের উপর কুঠার হানতে
আমাদের হয় না মায়া।
আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছি
বনের পর বন,
এটাই যে আত্মধ্বংস
বোঝে না মানবমন।
বৃক্ষনিধন বন্ধ করতে
যদি করি বেশি দেরি,
খুব দ্রুত বন্ধ হবে
মানবজাতির ফেরি।
এখনই উপযুক্ত সময়,
আসুন পৃথিবীকে করে তুলি বৃক্ষময়।
ছদ্ম প্রেম
তুমি আমার জীবন ছিলে, ছিলে আমার স্বপ্ন,
হীরে-জহরতের চেয়েও তুমি ছিলে দামী রত্ন।
তোমায় নিয়ে উড়াল দিতাম ঐ সুনীল আকাশে,
ডানা মেলে কিংবা মেঘে মেঘে ভেসে।
আমার জীবন সমুদ্রে তুমি ছিলে তরী,
তুমি আর আমি একসাথে দিতাম পাড়ি।
তোমায় নিয়ে হারিয়ে যেতাম ঐ দিগন্তে,
যেখানে আকাশ মেশে মাটির সাথে।
হঠাৎ তুমি আমায় ছেড়ে, অন্য কারো হয়ে গেলে,
চলে গেলে দুহাত নেড়ে, আমার ভালোবাসাকে অবহেলে।
এখন বুঝি, তোমায় ভালোবাসা আমার সবচেয়ে বড় ভুল,
কষ্টের পাথারে রয়েছি ডুবে, হারিয়ে সমস্ত কুল।
হয়তো তুমি পেয়ে গিয়েছ আমার চেয়ে ভালো কেউ,
কিন্তু পাবে না তার মাঝে আমার ভালোবাসার ঢেউ।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনের জীবনের আলোকে রচিত)
করোনায় প্রকৃতি
হায়রে মানবকুল,
জেনেবুঝে করো কত সহস্র ভুল!
যে প্রকৃতি তোমায় খাদ্য দেয়, দেয় তোমায় আশ্রয়,
সে প্রকৃতিকে ধ্বংস করতে, করে না তোমার ভয়।
এখন সে তোমায় দেখিয়ে দেবে তার আপন ক্ষমতা,
ভুলের মাশুল নিবে সে, হারিয়ে সকল মমতা।
তোমার ভুলেই ধ্বংস প্রকৃতি, মুক্ত হয়েছে করোনা,
প্রকৃতি করেছে গৃহবন্দী, ঘর ছেড়ে তুমি নড়োনা।
যদিও এ রোগে আক্রান্ত অনেক, মৃতের সংখ্যা ভীষণ,
তবুও এ রোগ থামিয়ে দিয়েছে সকল প্রকার দূষণ।
আজ তুমি গৃহবন্দী, রোগভয়ে দুর্বল,
চেয়ে দেখো তাই, পুনরায় প্রকৃতি হয়েছে সুনির্মল।
করোনা দ্বারা প্রকৃতি তোমায় শিক্ষা দিল নীরবে,
তোমার কাজ বন্ধ থাকলে প্রকৃতি কত সুন্দর হবে।
মৃতপ্রায় গাছ প্রাণ পেয়েছে, ফিরে এসেছে পাখি,
তোমার তরে নয়, পৃথিবীর তরে করোনারে আরো ডাকি।
একদিন করোনা চলে যাবে, চালু হবে কাজ সব,
মাটি-পানি-বায়ু দূষিত হবে, থামবে পাখির কলরব।
কিন্তু তুমি চাইলেই পার, এ পরিস্থিতি রুখতে,
এখন প্রকৃতি যত নির্মল, তত নির্মলই রাখতে।
এখনের সবুজ বৃক্ষ, বিশুদ্ধ বায়ু, পাখিরা তোমায় ডাকে,
ডেকে বলে, করোনা চলে গেলেও প্রকৃতি যেন এমনই থাকে।
Go to top